এবার আমি কলকাতার ফ্ল্যাট থেকে চলে যাব গ্রামের বাড়ি৷ আমার জন্মস্থান৷ নদী-গাছপালাময় গ্রাম নাটশাল৷ এই গ্রামের নামটা কী মধুর লাগে আমার কাছে, একটা নীরব আবেদন যেন রয়েছে এর ভিতর৷ আসলে গ্রামে যারা জন্মায় তাদের মনের ভিতরের থেকে ভালোবাসা ও মায়া-মমতার শিকড় ঢুকে পড়ে মাটির সাথে---গ্রামের দিকে আমি চলেছি একদিন কলকাতার ফ্ল্যাট থেকে৷ ফ্ল্যাটে অনেক আধুনিক সুখ আছে, তবে মাটি নেই---মন নেই---মন আছে, তবে যে যার মতো বদ্ধ দুয়ারের ভিতর আটকে রয়েছে৷ সেই মনগুলো বেরিয়ে পাখি হয় না, কেবল রোবটের মতো হাঁটে৷ কারণ এই পৃথিবীতে সবাই সবার কাছে অবিশ্বস্ত হয়ে উঠেছে দিন দিন৷
আর সেই গোপন জ্বালা সবার ভিতর৷ তাইতো মনগুলো সব ফ্ল্যাট বন্দি৷ মাটি থেকে জন্মেছি আর মাটি ছেড়ে হাঁটা চলা, কথা বলা---ভালবাসা সব-ই কনক্রিটের ওপর৷
এর নাম কি জীবন হতে পারে৷ বারবার অবচেতনার অন্ধকারে কে যেন এই প্রশ্নগুলোকে জোনাকির মতো ওড়াতে শুরু করল৷
এই উপলব্ধিটা আমি বেশ পরখ করতে পারলাম---এই যান্ত্রিক নগর কলকাতায়---ফ্ল্যাট থেকে---আর পথ চলতে চলতে, গাড়ির ধোঁয়া নিতে নিতে, পেট্রলের গন্ধ নিতে নিতে আর নিষ্প্রাণ ‘হাই হ্যালো’ শুনতে শুনতে৷
না, আমি দেশের বাড়িতে যাব, ওখানে দেখব আমাদের গ্রামের দেওয়াল-গাছ-পালা-গ্রাম্য ঘরের ছাউনি আর পশুপাখি৷ আর মাটিতে চলব-বলব-হাসব আর কোনো বাল্য বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে বলব-কী রে কেমন আছিস, মনে পড়ে, মার্বেল খেলার সময় দুজন কী মারামারি না করতাম৷
গ্রামটা এমনই, এর শেকড় মারাত্মক সুদূর; যারা এখানে জন্মায় তারা আকাশ ছোঁয়, বাতাস ভালোবাসে, হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে পারে স্বপ্নকে বাউলের মতো৷
আমি তো গ্রামের ছেলে৷ কী গর্ব আমার মনে মনে।
নাটকীয় আধুনিকতার চাপে বাইরে লুকিয়ে রাখি-আমি গ্রামের ছেলে---এই গর্বের পরিচয়টায় মনের ভিতরটা কেমন যেন হতে থাকল, কতক্ষণ পর গ্রামে যাব৷ গ্রামের মানুষদের অবাক করে বলব---তোমাদের সেই মাইকেল পৃথিবীকে বদলে দেবার কী ভাবনা এনেছে, দেখ৷
আমি বিদেশের প্রধানমন্ত্রীদের প্রশংসা পেয়েছি৷ দেখবে তোমরা৷ আর চমকে যাবে, তোমাদের ছেলে মাইকেল, কী করছে, কী বিরাট ভাবনা ভাবছে পৃথিবীর জন্য৷
আসলে সফলতাকে তো ঝুলিতে বয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না প্রমান দেখানোর জন্য৷ এটা এমন জিনিস৷
তবু, আমি দেখাব ওদের ওখানেই সেটা প্রমাণ দিয়ে৷
চলেছি গ্রামে, কলকাতা থেকে বাসে, তারপর ট্রেনে, তারপর হেঁটে বা রিক্সাতে৷ আমি মাটির ওপর দিয়ে হাঁটব গ্রামে গিয়ে, এই কোট-প্যান্ট-টাই খুলে হয়ে যাব সেই গ্রাম্য ছেলেটা, সরল স্কুলের ছেলে, মাইকেল৷
বলতে বলতে আমি সব অনুভবগুলোকে অদৃশ্য ব্যাগে ঢুকিয়ে নিজের খুব দরকারি সম্পদের মত বয়ে নিয়ে চলেছি---যে ভাবে তোমরা কোথাও বেরোবার সময় ব্যাগে করে জল-বিস্কুট, খাবার-দাবার সঙ্গে করে নিয়ে যাও।
রাস্তায় চলতে চলতে খাব বলে মনের জোঠরে—আহা সেই গ্রামের স্মৃতি, ভালোবাসার স্মৃতি, ঝগড়ার স্মৃতি, পিঠে, পুলি, ভাত, পান্তার স্মৃতি, গাছে উঠে কুল পাড়ার স্মৃতি৷ বাসে বসে বসে এগুলি ভাবছি৷ আসলে এই সব সুন্দর অনুভব দেয় জীবন বোধ, মাটিকে ভালোবাসার বোধ, গ্রামকে মনে রাখার বোধ, জীবন প্রকৃতির সাথে মিশে থাকার বোধ আর এইটা সারা বিশ্বে যাতে হয়---সে জন্যই তো আমার এই সংগ্রাম!
দিন রাত পরিশ্রম করে সঞ্চিত অর্থ খরচ করে, নিঃস্ব হয়ে, পৃথিবীর জন্মদিন পালনের যুদ্ধ৷ একক শক্তিতে যুদ্ধ৷
বলতে বলতে আমি পৌঁছে গেলাম আমার ঘরের উঠোনে৷ এই উঠোনে আমি বসতাম, গল্প করতাম, মাদুর পেতে শুয়ে থাকতাম, এভাবে জন্ম থেকে কাটিয়েছি কত না বছর৷
এই হাওয়া, এই রোদ, এই বৃষ্টির ছাট, এ সব থেকে যেন চলে গিয়েছিলাম---কোনো আলাদা গ্রহে৷
আজ চলে এসেছি, ফিরে এসেছি, এই গ্রাম থেকে শুরু হবে, আমার জন্মভূমির গ্রাম থেকে শুরু হবে বদলানোর বিপ্লব৷
বলতে বলতে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম, পরিচিত বন্ধুদের সাথে আলোচনা করলাম৷ কে কীভাবে সাহায্য করবে৷ ওরা সায় দিল৷ যুক্তি দিল নানা ভাবে, বিষ্ময় নিয়ে, উৎসাহের সাথে৷
আস্থা পেলাম৷ মাইকেলকে কেউ পাগল বলছে না৷ কেউ হয়তো মনে মনে ভেবেছিল, মাইকেল কী পাগল হল নাকি৷ ওর ঠাকুরদা দুহাজার বিঘে জমি উড়িয়েছেন ফুটবল খেলার উৎসব করে করে৷
তিনি গ্রাম থেকে বহু লোককে নৌকাতে করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতেন-যেখানে যেখানে খেলা হতো। যতদিন ওনাদের দলটা খেলতে থাকতো ততদিন প্লেয়ার ও সমর্থক শত শত মানুষের খাওয়া দাওয়া উনি একাই সামলাতেন জমি বেচে৷ তখন তো ব্যাঙ্কের চল ছিল না৷ মহান ধনীরা এভাবেই নিজেরা নিঃশেষ হয়ে সমাজকে গড়তেন৷ আনন্দ দিতেন৷ আর বংশধরদের ভিখারি করে যেতেন৷
না এটাও হয় তো ভুল বললাম৷ বরং তারা এইভাবে নিঃস্ব হয়ে দেখাতেন পৃথিবীর জন্যই সব দিতে হয়---সমাজের উন্নতির জন্য সব দিতে হয়৷ হয়তো তাঁরা পুরো পৃথিবীকে নিয়ে আমার মতো ভাবেন নি, কিন্তু তাঁদের ভাবনার ভিতর বীজ লুকিয়ে ছিল বিশ্বমাতাকে ভালবাসবার৷
হ্যাঁ, যা বলছিলাম, কেউ হয়তো আমার পৃথিবীর জন্মদিন পালন করার পবিকল্পনা শুনে ভেবেছিল ওসব কাহিনি---আমার ঠাকুরদাকে নিয়ে তারা মেলাচ্ছিল, আমিও আমার ঠাকুরদার মতো ফকির হবো৷
ঠাকুরদা পিতৃপুরুষের সব সম্পদ খরচ করেছিলেন এভাবে পৃথিবীকে ভালোবেসেই, আর আমি দিচ্ছি আমার কষ্টোপার্জিত টাকা বিশ্বশান্তির জন্য৷ কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমি ঠাকুরদার চেয়ে বা ওই ধরনের পুরনো মানুষদের চেয়ে বেশি দরদী বা মহান, কারণ যখন মানুষ অনেক ভোগ বিলাসের সুযোগ পেয়েও সেই সুযোগ না নিয়ে, পূর্ব পুরুষের থেকে প্রাপ্ত বা যে কোনো তরফ থেকে দান মারফত প্রাপ্ত সম্পদকে জগতের কোনো না কোনো কাজে লাগান, তখন প্রমাণ করে সেই ব্যক্তি জীবন যাপনের স্বাভাবিকতায় বিশ্বাসী৷ অজান্তে ওই জাতীয় মানুষদের প্রভাব প্রকরণ আমার উপর পড়েছিল কিনা জানিনা, কিন্তু অজানা এক নিয়মে, আমি পৃথিবীর জন্য নিজের সর্বস্ব দিতে শুরু করলাম৷ আসলে এই যে শব্দটা বললাম ‘দিচ্ছি’, এটা খুব ভুল বললাম৷ তোমরা আমাকে মাপ করে দাও এই জন্য৷ কারণ, আমরা তো বিশ্বমাতার থেকে সব নিই৷ এই জীবন পেলাম, চলবার অধিকার, ভালোবাসার অধিকার, প্রতিবাদ করার অধিকার, কর্ম করার অধিকার, কর্ম করে অর্থ পাবার পন্থা সব পেলাম, আবার অর্থ রোজগারের পন্থা, কর্মের বিনিময়ে পাই সেই যে টাকা, তৈরি হয় বিশ্বমাতার তৈরি খনিজ দ্রব্য থেকে ও বৃক্ষ থেকে৷
যা পয়সা সেটা ধাতু, যা কাগজের টাকা সেটা বৃক্ষ থেকে৷ ভুল তো বলিনি৷
আসলে আমরা বিশ্বমাতাকে দিলাম-ই বা কী৷ সব-ই তোর তাঁর৷
আসলে তাঁর থেকে নিয়েই তাঁকে দিতে হবে৷ যে বেঁচে থেকে দিয়ে যায়, দিল, যে বেঁচে থেকে দিতে চায় না, সে সব রেখে ঘুমের দেশে চলে যায়৷
তাহলে, এই পৃথিবীতে থেকে পৃথিবীকে কেউ কিছু দিই না, সবই তো নিই৷ আর সেই নিয়ে সেটা যদি উপযুক্ত ভাবে ব্যয় করতে পারি---তবেই এই জগৎ আর পৃথিবীমাতা সুস্থ থাকবে৷
তাই তো আমি ভেবেছিলাম, আমার যখন কিছুই নয়, এই দেহ, এই মন, এই অর্থ, তাহলে কেন স্বার্থপরতার মানদন্ডে নিজেকে দাঁড় করিয়ে নিজেকে নিজের যন্ত্রণার কারণ করে তুলব৷
না, এই সব উপলব্ধি করতে করতে চলে এল ১৫ই জানুয়ারি৷ তার কিছু আগে ব্র্যান্ড কবিতা নিলাম, কবি-শিক্ষক তপন মাইতির থেকে৷
আসলে তখন আমার চেনা জানা ছিল না কারো সাথে৷ সাহিত্য-শিল্প সম্পন্ন পরিবারের ছেলে তো আমি নই৷
বাণিজ্যে স্নাতক আর হোটেলের উপর পড়াশুনো৷ তাছাড়া ব্যক্তিগত ভাবেও আমি সাহিত্য-টাহিত্য থেকে বহু দূরে৷ তাই কলকাতার কোনো কবি-লেখকের কাছে যাব---সে সাহস ও প্রথা-পদ্ধতি আমার জানা ছিল না৷
পরিচিত শিক্ষক তপন কুমার মাইতিকে বললাম৷ উনি মূলত শিক্ষক৷ এই অজ পাড়াগাঁয় থেকে এখানে ওখানে যতটা পারেন লেখেন৷ যাব আর কার কাছে৷ গেলাম ওনার কাছে৷
ইংরেজিতে যাকে বলে ‘মিরাকেল’---তাই হল৷ তপনবাবুর লেখা চমকে দিল আমাকে৷ সাহিত্য বুঝিনা মানি, কিন্তু ছেলেবেলা থেকে বইপত্তরে কবিতা পড়েছি---অবচেতনে এইসব তো লুকিয়ে রয়েছে---সেইগুলিকে মাপক ভেবে অবচেতনের দৃষ্টি দিয়ে বাইরের চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম তপনবাবুর কবিতা ‘পৃথিবীর জন্মদিনে’ আর একটি সংগীত ‘পৃথিবী ও পৃথিবী, তুমি নাও গো আমার প্রণাম৷’
আসলে তপন কুমার মাইতির যোগ হল মাঠের সাথে, ধান জমির সাথে, শীতের আলু, বেগুন, কপির সাথে, ছাগল, গরু, পাখির সাথে---পুকুর ঘাটের সাথে, রাতের জোনাকির সাথে৷ তপন কুমার মাইতির যোগটা গ্রামের মাটির সাথে, মানে অকৃত্রিম পৃথিবীর সাথে৷ তাই এইরকম ভাবনার ওপর এমন কবিতা-সঙ্গীত উনি লিখতে পেরেছিলেন---এতোটা সাবলীল ভাবে।
বিশ্বমাতা যেন কানে কানে বলল, এ বার বুঝলি তো মাইকেল, তোর বিশ্বশান্তির যে ভাবনা, তা কত খাঁটি৷
মানুষ যেদিন অকৃত্রিম জীবন যাপন করবে---সে দিন সে সত্যিকারের সুন্দরকে আয়ত্ব করতে পারবে---একা একাই এসে যাবে তার শরীরে ও মনে---সব শান্তি, সুখ৷
আসলে, আমার অবচেতনের ভিতর কোনো এক আলো যেন কুয়াশার ভিতর থেকে জানিয়ে দিল এই সব বার্তা---আমি যা করছি ঠিক করছি, আমি অর্থ খরচ করে ভিখারি হচ্ছি, সেটাও ঠিক করছি৷
প্রচুর অর্থ জমিয়ে আমি ধনী হতে পারি, সে টাকা খেলিয়ে উদ্যোগপতি বা পুঁজিপতি হতেও পারি, কিন্তু
কেইবা পুঁজিপতি, সব পুঁজি তো বিশ্বমাতার৷ তাঁর পুঁজি তুলে নিয়ে, বিশ্বমাতার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলি---আমি পুঁজিপতি, কেউ বলেন---আমি ক্ষমতাশালী৷ আমি রাজা৷ এইসব৷
না, অর্থ জমিয়ে আমি পুঁজিপতি হতে চাইনা, আর অর্থ ছড়িয়ে কোনো ক্ষমতাবান হয়ে সিংহাসন নিতে চাই না৷
কী হবে এসব৷ আমার বিশ্ব ভাবনার এত সুখ এর চেয়ে তো কোনো কিছু বড় নয়৷
সব ব্যবস্থা করে নিলাম৷ এখন আমি খুবই ব্যস্ত৷ অনুষ্ঠান করতে হবে৷ চলল বিরাট তোড়জোড়৷
লোকে বলল, দাদা, মনে হচ্ছে এখানে শাকিরা বা মাইকেল জ্যাকসন আসবে৷ এ কী করছেন৷
অনেকে দুর্ভাবনায় পড়ে গেল, এই জন্য যে, এত পরিকল্পনা এত খরচ করে কী হবে৷
কিন্তু তারা এগিয়ে এল, কারণ তারা ব্যাপারটাতে একটা বিস্ময়কর কিছু বুঝেছেন৷
কেউ বলল, বিদেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রশংসাপত্র পেয়েছে যে ছেলেটা, সে কি পাগল!
যে-দেশের লোক সাদা চামড়া দেখলে ভগবানের মতো ভাবে, আর ইংরেজি কেউ বললে সে সাদা বা কালো যাই হোক, তাকে মহান কিছু ভাবে, হয়তো এই ভাবনার পেছনে কোনো ঐতিহাসিক সত্য রয়েছে কিছুটা, সে যাই হোক, ওরা বুঝল ইংরেজি ভাষা যে সব দেশে প্রচলিত সেই সব দেশের লোক আমাকে যেহেতু গুরুত্ব দিয়েছে, তাই এর অবশ্যই গুরুত্ব রয়েছে৷
তাই সেই সরল গ্রাম্য নাটশালের ছেলেটা আমি কী করতে চলেছি, তাও আবার বিশ্বভাবনা নিয়ে, সেটাই সবাই দেখতে চায় গর্বের সাথে।
আর এইসব পাঁচমিশেল ভাবনা, কথা ও কল্পনা নিয়ে এখানকার লোকে পাঁচ রকম কথা বলতে, আলোচনা করতে শুরু করল৷ আর এভাবেই আমার ভাবনার প্রচার হল। আমাকে নিয়ে প্রচার হতে থাকল অন্তরালে, নিঃশব্দে, ঘরে ঘরে, পথ থেকে পথে, বাজার থেকে বাজারে, দোকানে রিক্সায়---সর্বত্র৷
যথারীতি এল ১৫ই জানুয়ারি, হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি মঞ্চটা সাজিয়েছে দক্ষ কুশলীরা কী অদ্ভুতভাবে৷ বিদেশের বড় বড় অনুষ্ঠানের মতো৷ কল্পনা করতে শুরু করলাম, এই নাটশালে হবে জি-২০ বৈঠকের স্টেডিয়াম---বিশ্বশান্তির বৈঠক করতে এখানে আসবেন পৃথিবীর কত নেতানেতৃগণ৷ পৃথিবীর বড় বড় ফাংসন হবে এখানে৷ হয়তো শাকিরা, বৃটনি স্পিয়ার্সরা আসবেন৷ বিদেশের প্রধানমন্ত্রীগণ যদি এই অখ্যাত গ্রাম্য ছেলেটাকে তার চিন্তা ও কর্মের জন্য প্রশংসা করতে পারে, তবে শাকিরা, বৃটনি স্পিয়ার্সদের মতো বিশ্ব-খ্যাত গায়িকারা বা এই সমান মাপের গায়ক-গায়িকা,নৃত্যশিল্পরা কেন এখানে আসবেন না একদিন৷ স্বপ্নটা আরো গাঢ় হতে থাকে--- সকাল থেকে, ১৫ই জানুয়ারি, প্রখর শীতে যখন তাকিয়ে আছি সকালের রোদ ভরা মঞ্চের দিকে৷
রোদ পড়েছে মঞ্চে, এ যেন মঞ্চে রোদ পড়েনি, এ রোদ পড়েছে আমার স্বপ্নের ওপর---রোদ পড়েছে আমার বিশ্বশান্তি ভাবনার ওপর---রোদ পড়েছে জনচেতনার ওপর---রোদ পড়েছে রাষ্ট্রসংঘের জানালা ভেদ করে গুপ্তকক্ষে৷
আমি এসব দেখতে পাচ্ছি৷ বোঝাতে পারবো না কী সেই অনুভূতি৷ এদিকে এটা চাই, ওটা চাই, এটা আসেনি, ওটা আসেনি, কারোর বা পেরেক ফুটেছে --- ওর ঔষধ চাই---এসব ঘটছে প্যান্ডেল নিয়ে কাজ করার সময়৷
কত ব্যস্ততা৷ ব্যস্ততার সাথে মুগ্ধতা---এখান থেকে শুরু হলো বিশ্বশান্তির নতুন সূর্য তৈরীর আয়োজন৷
পরপর দূর থেকে অতিথি ও জনসাধারণ আসতে শুরু করল, সময় মতো এলেন জাপানের NISSIN কর্পোরেশন-এর জেনারেল ম্যানেজার কেইতা কাবাইয়ামা, লোকে অবাক হল৷ তাই তো, জাপানের এত বড় ধনী লোক, মাইকেলের এই বিশ্বমাতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ফিতে কাটতে আসছেন৷
যে কেয়া চক্রবর্তীকে টিভিতে দেখি, টিকিট কেটে ফাংশনে দেখতে হয়৷ লোকে এভাবেই আলোচনা করছে, তিনি আসছেন মাইকেলের অনুষ্ঠানে--- আর সকলের সাথে মিশছেন---কথা বলছেন৷
এই সব বিশেষ অনুভূতি ওদের ভিতর কাজ করছে৷ আলোচনা চলছে৷
কলকাতা থেকে এসেছেন MMIC-র দেবাশিস কুমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে৷ বিরাট পদের মানুষ৷
তিনি আমার বিষয়টা প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলেন৷
রাজনীতির পদেই তিনি আছেন৷ কিন্তু কী আশ্চর্য৷
এই ভাবনা তিনি যখন শুনেছিলেন---কোনো রাজনৈতিক ধারার মাঝে বিষয়টাকে না রেখে, একার নিয়মে তিনি গৃহছাড়া মানুষের মতো উদাসী পথিক হয়ে চলে এলেন আমাদের অনুষ্ঠানে৷
এল অনেক বৈদ্যুতিন মাধ্যম ও সংবাদপত্র৷
বুঝলাম আমার এই ভাবনা রাজনৈতিক ভুলগুলিকেও সরাবে মানুষের মন থেকে৷
আসলে আমি তো কিছু করছিনা, সব-ই করছেন বিশ্বমাতা৷ আমি তাঁর একজন সাধারণ সৈনিক মাত্র৷ আর বাইরে আমার পরিচয়ই বা কী, আলাদা কোনো পরিচয় থাকতে পারে বলে তো আমার মনে হয় না৷ হতে পারে না৷