ছোট্ট একটা শব্দ ডমিনেট। তার চাপ বড় প্রবল। যে অধিক শক্তিশালী, সে তার শক্তির জোরে নিষ্ঠুর ভাবে তার চারপাশের লোককে বাধ্য করে আনুগত্য স্বীকার করতে। গায়ের জোরে দাবিয়ে রাখে তার ইচ্ছে-অনিচ্ছে, ভালো-মন্দ, চাওয়া-পাওয়াকে! একটা পরিবার থেকে শুরু করে, একেবারে একটা দেশ পর্যন্ত সর্বত্রই একই গল্প। বহু ক্ষেত্রে এটাকেই ফ্যাশন বা স্ট্যাটাস সিম্বল বলেই ধরে নেওয়া হয়। বহুক্ষেত্রেই আবার দুর্বল মানুষ, অসহায় মানুষ, ডমিনেট করা বা ডমিনেটেড হওয়াকেই ভবিতব্য বলে মেনে নেয়। আসলে সুদীর্ঘদিন ধরে ডমিনেটেড হতে হতে মানুষ ভুলেই যায়, তারও একটা আলাদা সত্ত্বা আছে। তখন প্রবলের ইচ্ছে বা হুকুম তামিল করাই হয়ে যায় তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য; ঠিক রবীন্দ্রনাথের তাসের দেশের চিঁড়েতন, হরতন, ইস্কাবনের মতো; এক প্রবল শক্তিশালী নিয়ম ও অনুশাসনের বেড়াজালে তাদের ইচ্ছে-অনিচ্ছে, ভালোলাগা, ভালোবাসা, এমনকি তাদের আবেগকে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে তাদেরকে ইচ্ছের দাসে পরিণত করেছিল। আসলে ডমিনেটিং অ্যাপ্রোচটাই এমন যে একেবারে কঠিন মুঠোয় ধরে রাখতে চায় অন্যের জীবনকে। কিন্তু এই ঔদ্ধত্যের বা ডমিনেটিং টেন্ডেন্সির তো কোনো শেষ নেই। একজন মানুষ বা একদল মানুষ অথবা কোন দেশ- একে অপরের থেকে শক্তিশালী, কেউ বা আবার তার থেকেও শক্তিশালী। এর তো শেষ নেই! অথচ একটু ভেবে দেখলেই কিন্তু একেবারে প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত, অতি পরাক্রমশালী সম্রাট অথবা রাজা, অতি অত্যাচারী শাসক বা গোষ্ঠী কিন্তু মানুষের মনে ঘৃণার একটা চিরস্থায়ী ছাপ ছাড়া আর কিছুই রেখে যেতে পারেনি। মানুষ তাকে বা তাদেরও মনে রেখেছে, একটা ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মতো!
এই যে কেউ কাউকে ডমিনেট করে, সেটা পরিবারে হোক, রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে এক বা একাধিক দেশকেই হোক, এই ডমিনেট করার মতো জঘন্য মানসিকতা, স্পর্ধা এবং চরম ঔদ্ধত্য কি করে হয় মানুষের? এই পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ, তা সে প্রাকৃতিক সম্পদ হোক অথবা খনিজ সম্পদ, এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনায়, প্রতি ইঞ্চিতে যা কিছু আছে তার একমাত্র মালিক এই পৃথিবী। সর্বশক্তিমান সে। চিরটাকাল সে হাসি মুখে সব সম্পদ তুলে দিয়েছে আমাদের হাতে ভোগ ও উপভোগের জন্য, কোন বিধিনিষেধের বালাই বা কোন শর্ত না রেখেই। তাহলে আমাদের প্রত্যেকটি পদক্ষেপে, প্রত্যেক কাজে আমাদেরকে ডমিনেট করে নিরঙ্কুশ অধিকার ফলানোর কথা ছিল তার। তার থেকে বড় শক্তিশালী তো কেউ না, কিচ্ছু না; তার তুলনায় আমরা কি কীট-পতঙ্গের থেকে বেশি কিছু! ক্ষুদ্র কোন কীট-পতঙ্গ মরে গেলে যেমন ভাবে এই পৃথিবীর ধুলোয় মিশে যায়, আমরা মারা যাবার পরেও তো আমাদের পরিণতি ঠিক একই হয়! তা সে যত সাড়ম্বরেই কোন মানুষকে কবরস্থ বা দাহ করা হোক না কেন! ধুলোয় মিশে ধুলো হয়ে যায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী, গুণী, ধনী ও দামি ব্যক্তি! সবার পরিণাম ও পরিণতিই যখন এক, তখন কারোর ওপর কোন অধিকার ফলানো, জবরদস্তি কাউকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বা তার নিজস্ব সমস্ত ইচ্ছা ও বেঁচে থাকার প্রচেষ্টাকে কুক্ষিগত করে রাখার অতি ঘৃণ্য চেষ্টাকে কি কোন মতেই সমর্থন করা যায়? পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত থাকি আমরা ! তার ইচ্ছাতেই আমরা নিয়ন্ত্রিত হই শতকরা একশভাগ আবার আমরা অন্যকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। মহামহিম সম্রাজ্ঞী এই পৃথিবী আর আমরা সবাই তারই নিয়ন্ত্রণাধীন। সুতরাং সবারই পজিশন আর স্ট্যাটাস এক! তাই, কেউ কাউকে ডমিনেট করার বা ডমিনেটেড হওয়ার কোন কথাই থাকতে পারে না।